পরিবেশ দিবস পালনের ভাবনা এলো কীভাবে?
আন্তর্জাতিক
পরিবেশ দিবস পালনের ভাবনা এলো কীভাবে?
প্রতি বছর ৫ই জুন বিশ্বব্যাপী পালিত হয় পরিবেশ দিবস। মানুষ আর পরিবেশের দূরত্ব ঘুচিয়ে এক সবুজ নির্মল পৃথিবীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রতিবছর দিবসটিকে গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ১৯৬৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন চলাকালীন জাতিসংঘের কাছে মানব পরিবেশ সম্পর্কিত একটি সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব দেন অধিবেশনে উপস্থিত সুইডিশ প্রতিনিধিরা। 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
প্রস্তাবনায় বলা হয়, "সমন্বয় সাধনের সুবিধার্থে এবং মানব পরিবেশ সম্পর্কিত অত্যন্ত জটিল সমস্যাগুলোর বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর আগ্রহের দিকে মনোনিবেশ করার জন্য এমন সম্মেলন আয়োজন জরুরী।" সে প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত হয় মানব পরিবেশ সম্পর্কিত জাতিসংঘের প্রথম সম্মেলন, যেটি 'স্টকহোম সম্মেলন' নামেও বেশ পরিচিত। আন্তর্জাতিক পরিবেশ সম্পর্কিত সমস্যা ও সমাধান কিংবা ভবিষ্যত ভাবনাগুলোর বিষয়ে জাতিসংঘের প্রথম এই বৃহত্তম সম্মেলনকে দেখা হয় পরিবেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিকাশের একটি মাইলফলক হিসেবে। স্টকহোম সম্মেলন পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন দেশের সরকার কীভাবে একসাথে কাজ করতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা তৈরি করেছিল। এ সম্মেলন থেকে পাওয়া ধারণা এবং পরিকল্পনাগুলো বিগত বছরগুলোর প্রতিটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং পরিবেশ বিষয়ক চুক্তিতে প্রতিফলন রেখেছে। এ সম্মেলনেই প্রথমবারের মতো পরিবেশ দিবস পালনের আনুষ্ঠানিক সুপারিশ আসে৷ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করে। একইসাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রায় চার শতাধিক সংস্থা অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী সকল দেশের প্রতিনিধিরাই ঐকমত্যে পৌঁছান যে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এখনই মানব পরিবেশকে বাসযোগ্য করে তোলার পরিকল্পনা করা উচিত৷ পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উন্নত করার প্রচেষ্টায় সরকার এবং জনগণকে এক হয়ে কাজ করার প্রতি জোর দেওয়া হয় ১৩ জুন সম্মেলনের ১৪তম প্ল্যানারি মিটিংয়ে। এ লক্ষ্যে ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে মনোনীত করার সুপারিশ করা হয় সাধারণ সম্মেলনে।
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
একইসঙ্গে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় আলাদা একটি সংস্থা গঠনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে, যেটি পরে 'ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম' (UNEP) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ পরিবেশ বিষয়ক বিশেষায়িত এই সংস্থাটিই বর্তমানে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আয়োজনগুলোর মূল সমন্বয়ক। সংস্থাটির সদর দপ্তর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে৷ একই বছর ১৫ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭তম সম্মেলনে পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রথম উদযাপনের সময় থেকেই প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের জন্য নির্দিষ্ট একটি থিম বা বিষয় নির্ধারণ করে দেয় জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, সমসাময়িক পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই থিম নির্বাচনের ভাবনাটি এসেছে। একইসাথে প্রতি বছর যেকোনো একটি শহর বা দেশকে দিবসটির মূল আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শহর বা দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে থিমের ব্যাপারটি জড়িত। সাধারণত সংশ্লিষ্ট থিমে যে শহর বা দেশ সাফল্য পেয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারটিতে আয়োজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সে শহর বা দেশকেই নির্বাচন করা হয়। 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
একইসঙ্গে পরিবেশ ব্যবস্থাপনায় আলাদা একটি সংস্থা গঠনের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয় সম্মেলনে, যেটি পরে 'ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম' (UNEP) নামে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ পরিবেশ বিষয়ক বিশেষায়িত এই সংস্থাটিই বর্তমানে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের আয়োজনগুলোর মূল সমন্বয়ক। সংস্থাটির সদর দপ্তর কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে৷ একই বছর ১৫ ডিসেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭তম সম্মেলনে পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৭৪ সালে প্রথম উদযাপনের সময় থেকেই প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের জন্য নির্দিষ্ট একটি থিম বা বিষয় নির্ধারণ করে দেয় জাতিসংঘ। সংস্থাটি বলছে, সমসাময়িক পরিবেশগত উদ্বেগের বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্যই থিম নির্বাচনের ভাবনাটি এসেছে। একইসাথে প্রতি বছর যেকোনো একটি শহর বা দেশকে দিবসটির মূল আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। শহর বা দেশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে থিমের ব্যাপারটি জড়িত। সাধারণত সংশ্লিষ্ট থিমে যে শহর বা দেশ সাফল্য পেয়েছে এবং পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারটিতে আয়োজক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, সে শহর বা দেশকেই নির্বাচন করা হয়। 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
এছাড়া দিনটিতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে 'জাতীয় পরিবেশ পদক' প্রদানের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া র‍্যালি, আলোচনাসভার মতো কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সারা দেশে দিবসটির উদযাপন সীমাবদ্ধ। আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করি, যে বাতাসে শ্বাস নিই, তৃষ্ণায় পানি পান করি এবং জলবায়ু, যেটি আমাদের গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলে- এসবই প্রকৃতির নিঃস্বার্থ অবদান। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি বছর সামুদ্রিক গাছপালা আমাদের বায়ুমণ্ডলের অর্ধেকের বেশি অক্সিজেনের যোগান দেয় এবং একটি পরিপক্ব গাছ প্রায় ২২ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বিনিময়ে অক্সিজেন ছেড়ে দিয়ে মানুষের ক্লান্তিহীন উপকার করছে, বাঁচিয়ে দিচ্ছে মানুষের প্রাণ। আমাদের প্রকৃতি আমাদের যে সমস্ত সুবিধা দেয়, বিনিময়ে আমরা তার সিকিভাগ উপকারও স্বীকার করি না, ভালো থাকতে দিই না তার বেড়ে উঠায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে। জাতিসংঘ বলছে, প্রকৃতি আর মানুষের সম্পর্কের এই টানাপোড়েন মেটাতে পরিবেশ দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সে ভাবনা থেকেই সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতি বছর পরিবেশ দিবসের জন্য নির্দিষ্ট একটি বিষয়কে ঠিক করা হয়। দেড়শো'রও বেশি দেশে নানান আয়োজন থাকে এই দিনটিতে।
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতার মধ্যে গেল বছর থেকে পরিবেশ দিবস ঘরে থেকেই উদযাপনে জোর দিচ্ছে জাতিসংঘ। সেক্ষেত্রে উদযাপন হতে পারে যেভাবে-

  1. গাছ লাগান। বাড়ির বারান্দায়, ছাদে কিংবা আঙিনায় গাছ লাগান। পরিবেশ দিবসে গাছ লাগানোর উপরই বেশি জোর দেওয়া হয়।
  2. অর্গানিক অর্থাৎ জৈব খাবার খান। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যে খাবার তৈরি করুন।
  3. এড়িয়ে চলুন গণপরিবহন, ব্যবহার করুন বাইসাইকেল।
  4. সচেতনতা তৈরি হোক আপনার ঘর থেকেই। পরিবারের সদস্যদের পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারগুলোয় সচেতন করুন।
  5. পশুপাখির প্রতি সদয় হোন। পৃথিবীতে প্রত্যেকেরই বাঁচার অধিকার আছে৷ তাদের সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।
  6. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানে বেড়াতে গিয়ে যেখানে সেখানে আবর্জনা ফেলে, হৈ-হুল্লোড় করে পরিবেশটাকে নোংরা করে আসবেন না।
  7. প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে ভূমিকা রাখুন।
  8. পরিবেশের সমসাময়িক সমস্যাগুলোর সমাধান নিয়ে ভাবুন, আপনার কাছে উপযুক্ত কোনো সমাধান থাকলে সেটি পৌঁছে দিন সংশ্লিষ্টদের কাছে।
  9. পরিবেশকে তার মতো থাকতে দিন। বিরক্ত না করলে পরিবেশ তার মতো করেই বেঁচে থাকবে। বর্তমানের করোনা পরিস্থিতি সে শিক্ষাই দিয়ে যাচ্ছে আরও একবার।

জাতিসংঘ সাতটি ক্ষেত্রে পরিবেশ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বলছে, এর মাধ্যমে পরিবেশ দিবস তার সঠিক উদযাপনের উপলক্ষ হতে পারে বলে অভিমত সংস্থাটির।
  1. ব্যক্তিগতভাবে আমরা কী কিনছি, কীভাবে ব্যবহার করছি- সেটা আরও একবার ভাবা৷
  2. ব্যক্তিগত খাতে পরিবেশগতভাবে টেকসই ব্যবসায়ী মডেল কাজে লাগানোয় জোর দেওয়া।
  3. কৃষিক্ষেত্রে প্রকৃতির ক্ষতি না করে উৎপাদন সমৃদ্ধ করা।
  4. গণখাতে সরবরাহ চেইন ও অর্থায়নে পরিবেশগত দিকটি বিবেচনায় রাখা।
  5. সরকারিভাবে বন্যপ্রাণী ও তাদের আবাসস্থল নিরাপদ করে তোলায় সচেষ্ট হওয়া।
  6. তরুণদের এক সবুজ ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের মূল ভূমিকায় রাখা।
  7. সংগ্রাহক হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় প্রকৃতিকে কেন্দ্রবিন্দুতে রাখা।
এ বছর পরিবেশ দিবসের মূল আয়োজক পাকিস্তান। জাতিসংঘ পরিবেশ দিবসের থিম নির্ধারণ করেছে, " বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার "। বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ঠিক কতটা জরুরি সেটি বোঝাতে গিয়ে জাতিসংঘ বলছে, আগামী দশ বছর (২০৩০ পর্যন্ত) যদি এই পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া চালু রাখা যায় তাহলে বায়ুমন্ডল থেকে সর্বনিম্ন ১৩ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ গিগাটন গ্রিনহাউজ গ্যাস সরিয়ে ফেলা যাবে। এই প্রক্রিয়ার অর্থনৈতিক সুবিধার কথাও বলেছে সংস্থাটি৷ বিনিয়োগের চেয়ে নয়গুণ বেশি অর্থনৈতিক সুবিধা আসবে এই প্রক্রিয়ায়।

আন্তর্জাতিক
আরো পড়ুন