সন্তান ফিরে পেতে ১০ বছর ধরে লড়াই করছেন গৃহবধু তাজমিনা
সারাদেশ
সন্তান ফিরে পেতে ১০ বছর ধরে লড়াই করছেন গৃহবধু তাজমিনা
বগুড়া শহরের একটি ক্লিনিকে গৃহবধূ তাজমিনা আকতার সিজারিয়ান অপারেশনে যমজ (ছেলে-মেয়ে) সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় তার ছেলেকে ক্লিনিকের লোকজন বিক্রি করে দেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
এ সময় তাকে বোঝানো হয়-ছেলেটি মৃত ছিল। তাই তাকে ‘ডাস্টবিনে’ ফেলে দেওয়া হয়েছে। গ্রাম্য সালিশে পালক মা চায়না বেগম স্বীকার করেন সন্তানটি তিনি ক্লিনিক থেকে কিনেছেন এবং ছেলেটিকে ফেরত দিতেও রাজি হন। কিন্তু দালালদের কারণে তাজমিনা তার বুকের ধনকে ফিরে পাননি। সন্তান ফিরে পেতে তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন। আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এদিকে সন্তান ফিরে পেতে মামলা করে দুই দফা ১৭ দিন তিনি হাজত খেটেছেন। যোগসাজশ করে তার ডিএনএ পরীক্ষায় রিপোর্ট পরিবর্তন করা হয়েছে এবং হাইকোর্ট থেকে তা না জানিয়ে মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
 
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের ইতালিপ্রবাসী হেলাল উদ্দিনের স্ত্রী তাজমিনা আকতার জানান, ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই বগুড়া শহরের নূরানী মোড়ের আইভি ক্লিনিকে অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসব করানো হয়। এ সময় ক্লিনিকের চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম বুলু ও অন্যরা জানান, ছেলে বাচ্চাটা নির্জীব হওয়ায় মারা গেছে। লাশ ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। 
আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টও গায়েব করা হয়। ১০ দিন পর মেয়েকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। প্রায় সাত মাস পর ২০১৪ সালের মার্চে স্বামীর জন্মসনদ নিতে নেপালতলী ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে ঈশ্বরপুর গ্রামের নিঃসন্তান আনোয়ার হোসেন ও চায়না বেগম দম্পতির কাছে ছেলে সন্তান দেখে তিনি বুঝতে পারেন এটি তার সন্তান। এরপর তিনি গ্রাম্য সালিশ বসান। সেখানে চায়না বেগম জানান, ছেলেটি তার নয়; তিনি ক্লিনিক থেকে কিনেছেন। সন্তান ফেরত দিতে চায়না বেগম রাজি হলেও গ্রামের দালালদের কারণে তিনি সন্তান ফিরে পাননি। গত কয়েক বছরে তার ৩০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় করেও সন্তানকে ফিরে পাননি।
২০১৯ সালের ১৩ জুলাই ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরির টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার প্রফেসর শরীফ আকতারুজ্জামান স্বাক্ষরিত দুটি রিপোর্টের একটিতে প্রায় ৬৯ মিল ও অপরটিতে জিরো দেখানো হয়েছে। বগুড়ায় বিচার না পেয়ে তিনি ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। ট্রাইব্যুনালের নথি হাইকোর্ট তলব করলে ডিএনএর নেগেটিভ (জিরো) রিপোর্টটি পাঠানো হয়। তবে ডিএনএ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তলব করে পজিটিভ রিপোর্ট পান। এদিকে ক্লিনিকের চিকিৎসক প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে তাকে না জানিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়। ছেলেকে ফিরে পেতে তিনি উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল করেছেন। বিচারপতিরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, আসামি ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নোটিশ করেছেন। 
তাজমিনা আরও জানান, তার মেয়ের সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া ছেলের চেহারার মিল রয়েছে। তার ছেলে ভ্যানচালক পালক বাবার কাছে অনাদরে পালিত হচ্ছে। সন্তানকে ফিরে পেতে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বগুড়া পুলিশ লাইন্সের এসআই আবদুর রহমান জানান, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাজমিনার যমজ সন্তানের মধ্যে ছেলেটিকে বিক্রি করে দিয়েছে। আর এ ঘটনায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জড়িত। তার স্বামী ইতালি প্রবাসী হেলালুর রহমান বিপুল সম্পদের মালিক ও অর্থশালী। এ কারণে ক্লিনিক ও অন্যদের সঙ্গে তারা যোগসাজশ করে সন্তানকে ফিরে পেতে বাধা দিয়ে আসছে। 
সারাদেশবগুড়া
আরো পড়ুন