ভূমধ্যসাগর: নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অভিবাসীরা যে মৃত্যুর দরিয়ার অভিযাত্রী
আন্তর্জাতিক
ভূমধ্যসাগর: নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও অভিবাসীরা যে মৃত্যুর দরিয়ার অভিযাত্রী
শরণার্থী শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। কেউ কেউ এটিকে বলেন উদ্বাস্তু। ইংরেজিতে Refugee। শরণার্থী একজন ব্যক্তি যিনি নিজ ভূমি ছেড়ে অন্য দেশে অস্থায়ীভাবে অবস্থান করেন।
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
প্রতি বছর জুন মাসের ২০ তারিখ বিশ্বজুড়ে শরণার্থীদের অমানবিক অবস্থানের প্রতি আন্তর্জাতিক নেতাদের সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালন করা হয়। শরণার্থীদের নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সবার আগেই আসে ভূমধ্যসাগরের নিরীহ অভিবাসীদের গল্প। বিগত কয়েক দশকে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় অনেক দেশ থেকেই বৈধ ও অবৈধ উপায়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে চান। এই ভয়াবহ যাত্রায় কেউ কেউ সফল হন, আবার কেউ মৃত্যুবরণ করে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে সেখানে কী উদ্ধারকারী দল নেই? কিংবা কেন এই মুক্ত পৃথিবীতে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিতে হয়? আজ আমরা ভূমধ্যসাগরের এমন একটি মর্মান্তিক গল্প নিয়েই আলোচনা করবো। তাতে তুলে ধরার চেষ্টা করব উপরের সবকটা প্রশ্নের উত্তর। 
গল্পের শুরু
ছবি: আল জাজিরা
ছবি: আল জাজিরা
২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর দুপুর ২টায় জিও ব্যারেন্টস নামের একটি উদ্ধারকারী জাহাজ লিবিয়ার উপকূল থেকে প্রায় ৩০ নটিক্যাল মাইল দূরে একটি মারাত্মকভাবে জনাকীর্ণ কাঠের জাহাজের আহ্বানে সাড়া দেয়। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ লিবিয়া থেকে মাল্টা বা ইতালিতে নৌকার মাধ্যমে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যানুযায়ী অনুযায়ী শুধু ২০২১ সালেই এই পথ দিয়ে ৩২,৪০০ জন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। আবার মৃত্যুবরণ করা লোকের সংখ্যাও কম না। নিখোঁজ এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চাপের মুখে প্রকৃত সংখ্যা লুকায়। যাইহোক, নভেম্বরের যেদিনটিতে এই ঘটনাটি ঘটেছিল সেদিন ৩৪ বছর বয়সী স্যামুয়েল কার্তেজেনা সানচেজ উদ্ধারকারী দুটি জাহাজের একটিতে ছিলেন। তিনি স্পেনের এলচে থেকে উঠেন। আর ওই জাহাজটি ডক্টরস উইদাউট বর্ডারসের মালিকানায় ভূমধ্যসাগরে কাজ করতো।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্যানুযায়ী অনুযায়ী শুধু ২০২১ সালেই এই পথ দিয়ে ৩২,৪০০ জন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান।
স্যামুয়েল কার্তেজেনা সানচেজ
স্যামুয়েল কার্তেজেনা সানচেজ
প্রতিদিনের মতো সেদিনও উদ্ধার করতে কাজ শুরু করে দলটি। একপর্যায়ে তারা ভাসমান ৯৯ জন শরণার্থীকে উদ্ধার করে। আল জাজিরাকে দেয়া তথ্যমতে, সেদিন স্যামুয়েল ও তার দল যাদের উদ্ধার করেছিল তারা বেশিরভাগই নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, সোমালিয়া এবং সিরিয়ার নাগরিক। ওই সময় তারা টানা ৩ ঘণ্টা কাজ করে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। তবে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের মধ্যে দশজন ছিলেন মৃত। ওই মৃত ব্যক্তিরা বেঁচে যাওয়াদের ভাই, বোন বা আত্মীয়। স্যামুয়েল এক চিঠিতে লিখেন- প্রিয় দড়ি, আমি দুঃখিত আমি আপনাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলেছি। আপনি সবসময় আমার কাছে অনেক কিছু বোঝাবেন কিন্তু, সত্যিই, আপনাকে যেতে হবে। সেদিনের কথা মনে করিয়ে দেয়াটা আমার জন্য ভালো ছিল না। আমরা আপনাকে যতই পরিষ্কার করার চেষ্টা করি না কেন, আপনার সবসময় সেই মৃতদেহের গন্ধ ছিল। একটি বিশেষ গন্ধ নোনা জল এবং জ্বালানির মতো। তাই, আমি আপনার যে অংশ রেখেছি তা ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফুলভিয়া তোমার কাছ থেকে তার বিট ছুঁড়ে ফেলেছে। তোমার মনে আছে ফুলভিয়া, তাই না? তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি জলে উদ্ধারের সমন্বয় করেছিলেন, আমাদের জাহাজ, জিও ব্যারেন্টসের সেতুতে বার্তা রিলে করেছিলেন। আমার মনে আছে যখন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। আপনার গুণ মনোমুগ্ধকর ছিল, আপনি মাত্র দুই সেন্টিমিটার পুরু কিন্তু আপনার কালো, বিনুনিযুক্ত স্ট্র্যান্ডগুলি দুই টন ওজনের উদ্ধারকারী নৌকাগুলিকে টেনে নেয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। যখন আমাদের প্রয়োজন হয়। আমার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বছরের সামুদ্রিক চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে যার মধ্যে দেড় বছর অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের কাজ রয়েছে। কিন্তু এটি ছিল আপনার প্রথম মর্মান্তিক কাজ।'
প্রিয় দড়ি, আমি দুঃখিত আমি আপনাকে দূরে ছুঁড়ে ফেলেছি। আপনি সবসময় আমার কাছে অনেক কিছু বোঝাবেন কিন্তু, সত্যিই, আপনাকে যেতে হবে। সেদিনের কথা মনে করিয়ে দেয়াটা আমার জন্য ভালো ছিল না। আমরা আপনাকে যতই পরিষ্কার করার চেষ্টা করি না কেন, আপনার সবসময় সেই মৃতদেহের গন্ধ ছিল। একটি বিশেষ গন্ধ নোনা জল এবং জ্বালানির মতো। তাই, আমি আপনার যে অংশ রেখেছি তা ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ফুলভিয়া তোমার কাছ থেকে তার বিট ছুঁড়ে ফেলেছে। তোমার মনে আছে ফুলভিয়া, তাই না? তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি জলে উদ্ধারের সমন্বয় করেছিলেন, আমাদের জাহাজ, জিও ব্যারেন্টসের সেতুতে বার্তা রিলে করেছিলেন। আমার মনে আছে যখন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। আপনার গুণ মনমুগ্ধকর ছিল, আপনি মাত্র দুই সেন্টিমিটার পুরু কিন্তু আপনার কালো, বিনুনিযুক্ত স্ট্র্যান্ডগুলি দুই টন ওজনের উদ্ধারকারী নৌকাগুলিকে টেনে নেয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। যখন আমাদের প্রয়োজন হয়। আমার ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বছরের সামুদ্রিক চাকরির অভিজ্ঞতা রয়েছে যার মধ্যে দেড় বছর অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের কাজ রয়েছে। কিন্তু এটি ছিল আপনার প্রথম মর্মান্তিক কাজ।
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
অর্থাৎ তিনি যে দড়ি নিয়ে এতো এতো মানুষকে উদ্ধার করেছিলেন সেটিকে সযত্নে রেখে দিয়েছেন নিজের কাছে। পৃথিবীর সব মানুষ সব কিছু নিয়ে আবেগতাড়িত হন না। কিন্তু স্যামুয়েলের এই আবেগতাড়িত হওয়ার বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে স্বাভাবিক মনে হলেও মানবিক দিক দিয়ে বেশ কঠিন ও মর্মান্তিক।
উদ্ধার অভিযান
স্যামুয়েল কার্তেজেনা সানচেজ
স্যামুয়েল কার্তেজেনা সানচেজ
উদ্ধারকারী দল ওই নৌকার কাছাকাছি গেলে সমুদ্রের পানির স্রোতে ৫ জন নৌকা থেকে পড়ে যায়।
উদ্ধারের পূর্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের প্রায় ১০ মিটার উপরের সেতু থেকে উদ্ধারকারীদের অফিস ওই ভাসমান নৌকাটি দেখতে পাচ্ছিলেন যাতে একশোর বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল। স্যামুয়েল ও তার দলবল লিবিয়া উপকূল থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিলেন। যাইহোক, তারা পড়ে বুঝতে পারেন ওই শরণার্থীরা ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় যাবত সমুদ্রে ভাসছেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর স্যামুয়েল দেখেন, অনেকে ডেকের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন আবার অনেকে লুকিয়ে আছেন। কারণ তাদের মধ্যে অনেকে নেশাগ্রস্ত ছিলেন আবার অনেকে আতঙ্কিত ছিলেন। উদ্ধারকারী দল ওই নৌকার কাছাকাছি গেলে সমুদ্রের পানির স্রোতে ৫ জন নৌকা থেকে পড়ে যায়। এতেই বোঝা যাচ্ছে স্যামুয়েলদের জন্য ওই অভিযানটি কতোটা ভয়াবহ ছিল।  
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
উদ্ধারকারীরা নেশাগ্রস্তদের টেনে বের করেন। আর নৌকায় থাকা শরণার্থীদের মধ্যে লাইফ জ্যাকেট বিতরণ করেন। এরপর উদ্ধারকারীরা নিজেরাও হুলড ইনফ্ল্যাটেবল বোটে স্থানান্তরিত হন। এভাবে ধীরে ধীরে তারা উদ্ধার কাজ চালিয়ে যান। স্যামুয়েল বলেন, 'আমি উদ্ধারে এতটাই মনোযোগী ছিলাম যে, আমি মনে করতে পারছি না তারা পুরুষ নাকি মহিলা, প্রাপ্তবয়স্ক নাকি শিশু।' তবে উদ্ধারে সবচেয়ে বড় বিপত্তি সমুদ্রের ঢেউ ছিল না সেদিন। উপকূলের অপ্রতিরোধ্য জ্বালানী তেলের দূষণ, নেশাগ্রস্তদের কাছে থাকা মাদকের তীব্র গন্ধে তিনিসহ অন্য উদ্ধারকারীরা অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। স্যামুয়েল সেদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে ইতালিয়ান ভাষায় বলতে থাকেন। 
আমি উদ্ধারে এতটাই মনোযোগী ছিলাম যে আমি মনে করতে পারছি না তারা পুরুষ নাকি মহিলা, প্রাপ্তবয়স্ক নাকি শিশু।
১০ জন মৃত
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
শেষের ব্যক্তিটিকে তিনি যখন উদ্ধার করেন তখন তার মুখে শ্বাসকষ্ট যাতে না হয় সেজন্য অক্সিজেন নল প্রদান করতে হয়েছিল। স্যামুয়েল সেদিন নিজের অজান্তেই একে একে দশজন মৃত ব্যক্তিকে জাহাজে তোলেন। ডাক্তার তাকে বলেছিল, মৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই কয়েক ঘণ্টা আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। স্যামুয়েল জানান, যদি আরো কিছুক্ষণ আগে আসা যেত তাহলে হয়তো তাদের জীবিত উদ্ধার করা যেত। যাইহোক, ইউরোপিয়ানরা কখনোই ভূমধ্যসাগর নিয়ে এতোটা মানবিক হয়নি যে, হাজার হাজার শরণার্থীদের উদ্ধার করতে তারা সময়মত কাজ করবে। সবকটা মৃতদেহ জিও ব্যাগে ভর্তি করে জাহাজের মাস্টার স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
ইউরোপিয়ানরা কখনোই ভূমধ্যসাগর নিয়ে এতোটা মানবিক হয়নি যে, হাজার হাজার শরণার্থীদের উদ্ধার করতে তারা সময়মত কাজ করবে।
তাদের আত্মীয়রা যখন জানায় সবাই মুসলিম তখন জাহাজেই ছোট পরিসরে জানাজা আদায়ের ব্যাবস্থা করে উদ্ধারকারী দল।
এরপর সাবান ও মিঠাপানি দিয়ে ওই মৃতদেহগুলো পরিষ্কার করেন স্যামুয়েল ও তার দলবল। মৃতদেহগুলোকে ইতালিতে নিয়ে গিয়ে বর্ডার পেট্রোলের কাছে হস্তানরের পরিকল্পনা করে দলটি। কিন্তু তাদের আত্মীয়রা যখন জানায় সবাই মুসলিম তখন জাহাজেই ছোট পরিসরে জানাজা আদায়ের ব্যাবস্থা করে উদ্ধারকারী দল। আর এভাবেই সেদিন তাদের উদ্ধার করেছিলেন ওই ইতালিয়ান দলটি। তবে স্যামুয়েলদের এটি শেষ উদ্ধার কাজ ছিল না। জানুয়ারিতে বেশ কিছু উদ্ধার কাজ সম্পন্ন করে ফেরেন তারা। স্যামুয়েলের স্মৃতিতে ওই ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি বেদনাদায়ক। আল জাজিরা তার পুরো ভাষ্যটি লিপিবদ্ধ করেছে।
প্রাণের ঝুঁকি সত্ত্বেও কেন এই যাত্রা?
ভূমধ্যসাগার ইউরোপ-আফ্রিকার মধ্যবর্তী সাগর। যেটি জিব্রাল্টার প্রণালি দ্বারা আটলান্টিক মহাসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত। ২৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এই সাগর মানবপাচারের প্রাণকেন্দ্র। দুর্ঘটনা, মৃত্যু এখানে নিত্যদিনের ব্যাপার। প্রায় সময় নৌকা ডুবিতে মৃত্যুবরণ করছেন শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী। যেখানে রয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ। আইওএমের ২০১৭ সালে একটি জরিপের তথ্যানুসারে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করা ৫টি দেশের তালিকায় বংলাদেশও রয়েছে। লিবিয়া, তুরস্ক হয়ে ইতালি অথবা গ্রিস, ইত্যাদি দেশগুলোতে যেতে চায় সেসব মানুষ। বিবিসি বলছে, সাধারণত বাংলাদেশ ছাড়াও যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক অথবা সাব সাহারা অঞ্চলের কিছু দেশের অধিবাসী এই রুট ব্যবহার করে। সাধারণত কোনো মানুষ খুব সহজে নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে নিয়ে যায় না। মনোবিজ্ঞানীরাও এমনটা মনে করেন। সবদিক থেকে মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে পড়েন। তখন কোনো একটি স্বপ্নের পথ খোঁজ করেন। আর সে পথে যখন কেউ স্বপ্ন দেখান নতুন কিছুর, দিশাহীন মানুষগুলো সেটাকে সত্য ভেবে ঝুঁকি নেন। নেমে পড়েন অনিশ্চিত জীবনের পথে। মূলত অনিশ্চিত ক্যারিয়ারের হতাশা কাটিয়ে নতুন কিছুর প্রত্যাশা থেকে অনেকে এই পথে পা বাড়ান। 
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করা ৫টি দেশের তালিকায় বংলাদেশও রয়েছে।
আবার উন্নত জীবনের লোভ তো রয়েছেই। বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলছেন, যেকোনো মূল্যেই বাংলাদেশের অনেক নাগরিক দেশ ছাড়তে চান। ইউরোপ যেতে পারলেই তাদের ভাগ্য খুলে যাবে- তাদের এমনই মনোভাব। তরুণ প্রজন্মের এমন মনোভাব তাদেরকে ঝুঁকিতে ফেলছে। প্রয়োজনে তারা মহাসাগরে নামবেন! তবুও উন্নত জীবনে যেতে হবে। অনেকের কাছে ইউরোপ মানেই উন্নত জীবনের ছোঁয়া। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক তথ্যে বলছে, ২০১৯ সালে প্রায় সাড়ে ২৩ ‍হাজার শরণার্থী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন। আর এই সংখ্যা অনেক বাংলাদেশিকে লোভের দিকে পা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। এমন লোভনীয় পরিসংখ্যান দেখিয়ে দালালরা গ্রামের সাধারণ বেকার তরুণদের লোভে ফেলে দেয়। আর তারা গ্রামের জমি বিক্রি বা বন্ধক রেখে পাড়ি জমায় অনিশ্চিত পথে। এভাবে হারিয়ে বসেন সর্বস্ব।
২০১৯ সালে প্রায় সাড়ে ২৩ ‍হাজার শরণার্থী সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছেছেন। আর এই সংখ্যা অনেক বাংলাদেশিকে লোভের দিকে পা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে।
ছবি: ইন্টারনেট
ছবি: ইন্টারনেট
ভূমধ্যসাগ হয়ে ইউরোপে যেতে গিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৬ হাজার ৯০৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
জার্মান বার্তা সংস্থা ডয়েচে ভেলের মাধ্যমে জানা যায়, ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোর সংগঠন ফ্রন্টেক্স-এর জরিপ অনুযায়ী গত এক দশকে ৫২ হাজার বাংলাদেশি বিভিন্ন রুট দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। ডয়েচে ভেলের বরাত দিয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন বিষয়ক কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসন বলেন, 'বাংলাদেশের সব এলাকার লোক নয়, বিশেষ করে শরিয়তপুর, মাদারীপুর, নোয়াখালী, সিলেট এই অঞ্চলগুলোর লোকজনই অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করে। ইতালিতে তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকেন। তাই তারা মনে করেন, তাদের বোঝানো হয় কোনোভাবে একবার যেতে পারলেই আর কোনো সমস্যা নেই।' ইউএনএইচসিআর-এর হিসেবে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভূমধ্যসাগ হয়ে ইউরোপে যেতে গিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৬ হাজার ৯০৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, লেক্সান্ডার হ্যারিসন ক্রিপস, ডয়েচে ভেলে
আন্তর্জাতিকপ্রবাস
আরো পড়ুন