মৌমাছি: প্রকৃতির এক নিস্বার্থ অভিভাবক
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
হুট করে যদি কেউ আপনাকে জিজ্ঞেস করে বসে, “ পৃথিবীতে উপকারি পতঙ্গ গুলোর একটির নাম বলুন তো!” তখন চট করে যদি আপনার মাথায় মৌমাছির নাম না আসে তাহলে আপনি প্রকৃতির চোখে এক বড্ড অকৃতজ্ঞ মানুষ।হ্যা ঠিক তাই,কেননা এই ছোট্ট ফুলপ্রেমী পতঙ্গটির উপর নির্ভর করছে গোটা পৃথিবীর টিকে থাকা আর না থাকা। মানুষের সাথে মৌমাছির মধুর সম্পর্ক প্রায় নয় হাজার বছরের। পরিশ্রমী আর সামাজিক এই প্রানীটি কি নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের অস্তিত্বের সাথে তা হয়তো সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না কিন্তু সে কাজ করে যাচ্ছে নিরবে। আমেরিকার একটি শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় , কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক স্কট ম্যাকআর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে এবিসি নিউজ জানিয়েছে,
মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ পরাগায়নের মাধ্যমে বিশ্ব জুড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ফসল উৎপাদনে সরাসরি অবদান রাখছে। প্রকৃতি রক্ষা আর মানুষের খাবার তৈরির এই বিশাল দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছে বলেই হয়তো প্রাচীন গ্রিক পুরাণে মৌমাছিকে ‘ইশ্বরের দূত’ এবং মৌ-রসকে ‘অমৃত’ আখ্যা দেয়া হয়েছিল। এভাবেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই মৌমাছি তার উৎপাদিত পণ্যের জন্য সমাদৃত এবং সম্মানিত হয়ে আসছে মানুষের কাছে। আর তার আচার আচরণ,বুদ্ধিমত্তায় বিস্মিত করেছে মানুষকে।
ছোটবেলা ‘মৌমাছি,মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি’ কবিতাটি আমরা সবাই পড়েছি, মধু সংগ্রহে বের হওয়া মৌমাছিকে অনুনয় বিনয় করেও একটু দাড় করানো যায় না কারণ তার উপর বিশাল দায়িত্ব , ফুলে-ফুলে ঘুরে ঘুরে মধু সংগ্রহ করতে হবে তাকে। একবার মৌ-রস এবং পরাগরেণু সংগ্রহে বের হলে একটি মৌমাছি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ২০০ বার পাখা ঝাপটিয়ে ঘুরে আসে ৫০ থেকে ১০০০ ফুল। আমাদের এক চা চামচের ১২ ভাগের ১ ভাগ মধু উঠপাদন করতে একটি মৌমাছি তার সারা জীবনের শ্রম দিয়ে যায়। সে হিসেবে এক চা চামচ মধুর জন্য ১২ টি মৌমাছির সারা জীবন লেগে যায়। এক কেজি মধু উথপাদন করতে কম করে হলেও ৬ হাজার মৌমাছিকে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ৬০ লাখ ফুলে ঢুঁ মারতে হয় আর এজন্য তাকে উড়ে বেড়াতে হয় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার বা ৯৩ হাজার মাইলের সুদীর্ঘ পথ যা প্রায় ৪ বার পৃথিবী প্রদক্ষিণের সমান পথ।
আরো সহজ হিসেবে বলা যায় একটি মৌচাকে গড়ে ৩০ কেজি মধু উথপাদন করতে বছরে প্রায় ৭০ হাজার মৌমাছি নিরলস পরিশ্রম করে যায়। তাহলে এবার বলুন তো মধু খুঁজতে বের হওয়া সেই পরিশ্রমী মৌমাছি কেনোই বা মাঝ পথে দাঁড়িয়ে আপনার আমার গল্প শুনবে?
মৌমাছি খুবই পরিশ্রমী , সামাজিক এবং নিয়মতান্ত্রিক প্রাণী ।তাদের জীবন চলে প্রাকৃতিক ঘড়ি ধরে, প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলে তারা গণিতের সূত্র কষে। দলবদ্ধ জীবন যাপনের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মৌমাছি। মৌমাছির সমাজ চলে সুষ্ঠু সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্রের ভিত্তিতে। একটি মৌমাছির গোষ্ঠিতে তিন ধরনের মৌমাছির সহবস্থান দেখা যায় – কর্মী মৌমাছি (Worker), রাণী মৌমাছি (Queen) এবং ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি (Drone)। একটি সমাজ গড়ে উঠে মূলত এই তিন ধরণের মৌমাছির পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং কর্মকান্ডের মাধ্যমে।
একটি মৌচাকে একমাত্র উর্বর এবং প্রজননক্ষম সদস্য হলো রাণী মৌমাছি। এই রাণী মৌমাছিই নির্ধারণ করে ডিম ফুটে বের হওয়া উত্তরসূরী কোন গোত্রের সদস্য হবে। এক্ষেত্রে ছোট আকারের ডিম গুলোকে সিমেন লাগিয়ে নিষিক্ত করে নেয় যা থেকে পরবর্তীতে কর্মী মৌমাছি জন্মায় এবং বড় আকারের ডিম থাকে অনিষিক্ত এবং এরা বড় হয় ড্রোন বা পুরুষ মৌমাছি হিসেবে। রাণী মৌমাছির কাজ মূলত ডিম পাড়া এবং ড্রোন মৌমাছির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া পর্যন্ত। অন্যদিকে কর্মী মৌমাছিদের কাজের পরিধি বিস্তৃত। বয়স অনুযায়ী তাদের উপর বিভিন্ন কাজের ভার বর্তে। তারাই মূলত সকল কাজের কাজী। একটি মৌচাকের প্রায় ৯৯ ভাগ মৌমাছিই কর্মী মৌমাছি এবং এরা নারী মৌমাছি তবে এদের প্রজনন ক্ষমতা নেই। মৌচাক তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণ, পুরুষ, রাণী এবং লার্ভাদের জন্য খাবার সংগ্রহ, পুরনো লার্ভা ভক্ষণ, লার্ভাদের লালন পালন, মধুর নির্যাস সংগ্রহ কিংবা হুল ফুটানোর মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যারা জানান দেয় যারা তারা কিন্তু এই কর্মী মৌমাছিরাই।
এই কর্মী মৌমাছিদের কাজ বহু গুণ বেড়ে যায় গ্রীষ্মকালে যখন ফুলে মধু আসে, তখন তারা বাঁচে মাত্র ৬ সপ্তাহ অথচ শীতের মৌসুমে এরা প্রায় ৯ মাস বাঁচে।কর্মী মৌমাছিরা প্রয়োজনে বিদ্রোহ করতে পারে কিংবা কোন কারণে রাণী মৌমাছির অক্ষমতা প্রকাশ পেলে তাকে মেরেও ফেলতে পারে। এবার আসা যাক ড্রোন মৌমাছিদের কথায়। এদের স্বভাব কিছুটা অদ্ভুত বটে কেননা মৌচাকে তাদের তেমন কোনো কাজ করতে হয় না এমনকি তাদের খাবারও মুখে তুলে দেয় কর্মী মৌমাছি। তাহলে ড্রোন মৌমাছির জীবনের উদ্দেশ্য কি? এদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো রাণী মৌমাছির সাথে মিলন। রাণীর সাথে একবার মিলনের পর ড্রোন মৌমাছি গুলোর জীবনাবসান ঘটে।
মৌমাছিদের মৌচাকের একটি ‘সিক্রেট রেসিপি’ হলো রাজকীয় জেলি। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে আসার পর প্রথম তিন দিন সব লার্ভাকেই এই রাজকীয় জেলি খেতে দেয়া হয় যার ফলে লার্ভাদের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।তবে এই তিনদিন পর থেকে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সেই লার্ভাকেই দেয়া হয় রাজকীয় জেলি যাকে পরবর্তীতে বসানো হবে রাণীর আসনে।
এবার আসা যাক মৌমাছিদের কিছু বৈচিত্রপূর্ণ আচরণ প্রসঙ্গে। মৌমাছির বুদ্ধিমত্তা অন্য যেকোনো পতঙ্গ থেকে নিঃস্বন্দেহে উন্নত যার প্রমাণ মিলে তাদের কিছু আচরণে। মৌমাছিরা জীবনচক্রের প্রতিটি প্রদক্ষেপ ফেলে গণিতের সূত্র কষে।তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটে গোল্ডেন রেশিও মেনে। তাছাড়া গণিতে তাদের দক্ষতার ছাপ দেখা যায় তাদের বানানো মৌচাকের কুঠুরি থেকে। মৌচাকের কুঠুরি গুলো দেখতে ষড়ভুজাকার। এই কুঠুরি গুলো বানানো হয় মোম দিয়ে। ষড়ভুজ আকৃতির জন্য ঘরের আয়তন যেমন সর্বাধিক হয় তেমনি আবিষ্টকারী মোমের দেয়াল সর্বনিম্ন হওয়ায় মোম কম লাগে এবং জায়গা নষ্ট হয় না! এই অসাধারণ গঠনশৈলীর জন্য মৌমাছিকে দ্যা বেস্ট ন্যাচারাল আর্কিটেক্ট ও বলা হয়ে থাকে। মৌমাছির সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং অসাধারণ গুণের কথা বলতে গেলে যেটা মাথায় আসে তা হলো মৌমাছির নৃত্ত যাকে বলা হয় ‘The waggle dance’। এটি কোনো সাধারণ নাচ নয় এই নাচের মাধ্যমে মৌমাছিরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ , খবরাখবর আদান প্রদান করে থাকে। মৌমাছিদের ভেক্টর জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের দিক এবং দুরত্ব মাপার কৌশল থেকে।
কোন জায়গায় খাবারের সন্ধান বা মধুর নির্যাসের উৎস খুঁজে পেলে মৌচাকে এসে এমন এক পথ ধরে দেহ দুলাতে দুলাতে নাচতে থাকে যার মাধ্যমে সে উৎসের দিক নির্দেশ করে। এই উৎসের দিক ঠিক করে সূর্যের সাপেক্ষে যাতে সূক্ষাতিসূক্ষ ভাবে দিক বুঝা যায়। তাছাড়া সূর্যের গতিবিধির নিখুঁত হিসেব করে খাবারের বা মধুর নির্যাসের কাছে পৌঁছানোর নূন্যতম এবং সংক্ষিপ্ত দূরত্ব বের করে ফেলে মৌমাছিরা। আর যেহেতু মৌমাছি প্রাকৃতিক ঘড়ি মেনে চলে তাই সূর্যের গতিবিধি পরিবর্তনে তাদের তেমন একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না।মৌমাছি তার নাচের সময়ব্যাপ্তি এবং কম্পনের (দোলা) সংখ্যা দিয়ে বুঝায় ঠিক কত দূরে আছে ফুল এবং ফুলে কি পরিমাণ নির্যাস রয়েছে, যেমন ১ সেকেন্ডের দোলন বুঝায় উৎস রয়েছে ১ কিমি দূরে। মৌমাছির নাচের মাধ্যমে এই অদ্ভুত যোগাযোগ পদ্ধতিটি উদ্ভাবন করেন অস্ট্রিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল ফন ফ্রিস্ক। আর এই কম্যুনিকেশন কোড ব্রেক করার জন্য ফন ফ্রিস্ককে ১৯৭৩ সালে দেয়া হয় নোবেল পুরষ্কার
মধু যে মৌমাছি তৈরি করে তাতেও কিন্তু তাদের খাটনি কম যায় না,কর্মী মৌমাছিরা ফুল থেকে তরল মিষ্টি রস সংগ্রহ করে তা তাদের বিশেষ পাকস্থলিতে করে মৌচাকে নিয়ে আসার পর আবার তা মুখে এনে চিবুতে থাকে ফলে এর সাথে মিশ্রিত হয় একটি বিশেষ এনজাইম, পরবর্তী ধাপে মৌমাছিরা পাখা ঝাপটে প্রকোষ্ঠে রাখা তরল মধুর আর্দ্রতা কমিয়ে আনে এবং পেট থেকে মোম বের করে সেই প্রকোষ্ঠ গুলোকে সিল করে দেয়।মৌয়ালরা এই প্রকোষ্ঠ গুলো ভেঙেই মধু সংগ্রহ করে থাকেন।আর সিল করার জন্য ব্যবহৃত মোমও আমরা ব্যবহার করে থাকি। মধুর উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি।
ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে যখন চিনির সহজলভ্যতা ছিল না তখন খাবার দাবার মিষ্টি করতে প্রায় সব ক্ষেত্রেই মধুর ব্যবহার ছিল ব্যাপক।মধুতে আর্দ্রতা অর্থাৎ পানির পরিমাণ প্রায় ১৭ শতাংশ আর এর ৭৮ থেকে ৮০ শতাংশ হচ্ছে শর্করা বা চিনি।তাই যাদের চিনি এড়িয়ে চলা জরুরি তাদের এই ব্যাপারটি মাথায় রাখতে হবে। গলাব্যথা, বদহজম, ত্বকের যত্ন কিংবা কাটা-পোড়ায় অণুজীবনাশক হিসাবে ব্যবহৃত হয় মধু।
বসন্ত মৌমাছিদের মধু আহরণের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময়, এসব গাছে গাছে ফুলের সমারহ দেখা যায় আর এসব ফুলে উড়ে উড়ে মৌ-রস সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় তাদের।তাছাড়া আমাদের চাষ করা ফসলের ৮০ শতাংশের বেশি পরাগায়ন ঘটে এই মৌমাছির মাধ্যমে। মৌমাছি তার বুক এবং পায়ে থাকা লোমের মাধ্যমে পরাগরেনু বয়ে নিয়ে যায় এক ফুল থেকে অন্য ফুলে আর এই পরাগরেনু যখন অন্য ফুলের গর্ভমুন্ডে পতিত হয় তখন তা থেকে হয় ফল। এভাবে নিজের অজান্তেই মৌমাছি যুগ যুগ ধরে পরাগায়ণের অন্যতম প্রধান বাহক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।
পরাগায়ণে মৌমাছির এই নিরব অবদানের জন্য পৃথিবীতে থেকে এখনো অনেক উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে যায় নি। আর যেহেতু উদ্ভিদের উপর মানুষের নির্ভরশীলতা সম্পর্ক প্রত্যক্ষ তাই উদ্ভিদের সুরক্ষায় রক্ষা পাচ্ছে মানুষ ও সকল প্রাণী। এভাবে পরিবেশ আর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় মৌমাছি তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি বছর ধরে।
মৌমাছির হুল ফুটানো নিয়ে সবার মধ্যেই ভয় রয়েছে। এই হুল মূলত বহন করে কর্মী মৌমাছিরা আর তা ব্যবহার করা যায় একবারই। আমাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, কতগুলো মৌমাছি হুল ফুটালে তা মরণঘাতী হতে পারে? গিনেজ রেকর্ড এর হিসেব বাদ দিলে চিকিৎসকদের গবেষণা বলছে, একটা মানুষ মারতে ১১০০ হুল (বিষ) দরকার। তাই ৫-১০-১০০ টা মৌমাছি হুল ফুটালে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। মৌমাছির হুল যন্ত্রণাদায়ক হলেও হুলের বিষ বিজ্ঞানীদের কাছে সম্ভাবনাময় এবং গবেষণার বিষয়। মৌমাছির বিষে থাকে মিথানয়িক এসিড বা ফর্মিক এসিড (HCOOH)। যা HIV চিকিৎসায় কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে বলে ধারণা বিজ্ঞানীদের। তাছাড়া গেঁটে বাতের ব্যথা নিরাময়ে প্রদাহ নিরোধক হিসেবে কাজ করে হুলের বিষ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক জানিয়েছে, গত ১৫ বছর ধরে মৌমাছির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে মৌমাছি তার কলোনি হারাচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে। বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থা এবিসি নিউজ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মৌমাছির সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে। কোনো কোনো অঞ্চলে এমন হ্রাসের হার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে। শুধু ২০১৯ সালে ২ লাখ কোটি (দুই ট্রিলিয়ন) পোষা মৌমাছি হারিয়ে গেছে। কেন এমন হচ্ছে? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা প্রথমে দায়ী করেছেন ‘ভারোয়া মাইট’ নামক একটি ক্ষুদ্র পরজীবীকে। এশিয়ান ও ইউরোপিয়ান মৌ–চাষিদের জন্য ভীষণ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই পরজীবীর আক্রমণ।
কেননা এই পরজীবীদের আক্রমণ ঠেকাতে এখনো কার্যকরী কোনো উপায় জানা নেই মানুষের। ফলে ব্যাপক হারে মৌমাছির মৃত্যুতে একদিকে যেমন মধু উৎপাদন কমে যাচ্ছে, তেমনি পরাগায়ন ব্যাহত হয়ে ফলনও কমে যাচ্ছে। মৌ–উপনিবেশ ধসে ব্যাধি বা পরজীবীর আক্রমণের সঙ্গে আছে নানা রাসায়নিক (প্রধানত নেওনিকোটিনয়েড) কীট ও আগাছানাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, খরা, বাসস্থান হারানো, খাদ্যাভাব, দূষণ এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি।
মৌমাছি যদি না থাকে, তা হলে মানুষ নিশ্চিহ্ন হতে সময় লাগবে চার বছর।
আলবার্ট আইন্সটাইন
আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় এই ছোট্ট প্রাণী মৌমাছির গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে আলবার্ট আইন্সটাইন বলেছিলেন, “মৌমাছি যদি না থাকে, তা হলে মানুষ নিশ্চিহ্ন হতে সময় লাগবে চার বছর।” অসচেতন এবং অতিরিক্ত মোনাফা লোভী অসাধু মধু ব্যবসায়ীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে মৌমাছির কলোনি ফলে চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে মৌমাছি প্রজাতি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, মৌমাছি ছাড়া মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তাই মৌমাছির মধু নয়, তার দিকেই আমাদেরকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, বিশ্ব মানবতার প্রাণভোমরা লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট সুন্দর ফুলপ্রেমী প্রাণীটির মধ্যে।