আন্তর্জাতিক
ম্যাজিক ব্রিকস: একদিনে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করে যে চীনা প্রযুক্তি
চীন শুধুই বিশ্ব বাণিজ্য, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী উৎপাদনের জন্য পরিচিত নয়। নিজেদের প্রকৌশল দক্ষতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্যেও সুপরিচিত দেশটি। পৃথিবীতে দ্রুত সময়ে একটি হাই-স্পিড রেললাইন স্থাপন থেকে শুরু করে বিশ্বের গভীরতম গিরিখাত দিয়ে একটি হাইওয়ে তৈরি করা।

ছবি: ইন্টারনেট
কিংবা নিমিষেই ১০ তলা বিল্ডিং দাঁড় করানো, চীনা শ্রমিকেরা অনায়াসে এসব করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। কেন তাদের দেশের বাইরে থেকে শ্রমিক আনতে হয় না? কেমন তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা? এসব নিয়ে বেশ কানাঘুষা চলে পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে। চীন আর যাই হোক, নিজের কাজকে সহজ করার জন্য প্রচলিত প্রযুক্তিকে আরও বেশি উন্নত করে সময়োপযোগী করে তোলে। এতে করে তাদের প্রয়োজন হয় না বিদেশি শ্রমিক কিংবা পণ্যের।

ছবি: ইন্টারনেট
১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ এবং ক্লিন এয়ার সিস্টেম নির্মাণ করে থাকে। ২০০৯ সালে প্রথমবার 'বি-কোর স্ল্যাব' নামক নির্মাণ সামগ্রী উন্মোচন করে। এটি একটি তামার ব্রেজিংসহ স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ব্রিকস।
চীনের এমনই এক যুগোপযোগী প্রযুক্তি হলো ম্যাজিক ব্রিকস। চীনা রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ব্রড গ্রুপ এই অনন্য নির্মাণ সামগ্রী তৈরি করেছে। এই ম্যাজিক ব্রিকসগুলোর মাধ্যমে বিল্ডিং ব্লকগুলোকে একত্রিত করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে একটি বহুতল বাড়ি তৈরি করা যায়। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্লিন এয়ার সিস্টেম নির্মাণ করে থাকে। ২০০৯ সালে প্রথমবার 'বি-কোর স্ল্যাব' নামক নির্মাণ সামগ্রী উন্মোচন করে। এটি একটি তামার ব্রেজিংসহ স্টেইনলেস স্টিল দিয়ে তৈরি ব্রিকস। এটি কম ওজনের ছিল, তবে এর স্ল্যাব অত্যন্ত শক্তিশালী। ওই ব্রিকসগুলো দিয়ে মাত্র একদিনে ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেন চীনা শ্রমিকরা।
এটি যেভাবে কাজ করে

ছবি: ইন্টারনেট
প্রতিষ্ঠানটি প্রিফেব্রিকেটেড স্ট্রাকচার বা স্ল্যাব তৈরি করে যা কেবল নির্মাণ সাইটে একত্রিত করে জোড়া লাগানো হয়। এসব প্রিফেব্রিকেশন সাধারণত ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৮ ফুট প্রস্থ এবং ১০ মিটার উচ্চতার হয়ে থাকে। এগুলো বহন করা এতোই সুবিধাজনক যে প্রিফেব্রিকেশন সব স্ল্যাবগুলোকে বিশ্বব্যাপী যে কোনো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়া যায়। নির্মাণ সাইটে পৌঁছানোর পরে, মডিউলগুলো সহজভাবে আনপ্যাক করে ডিজাইন মতো যুক্ত করা যায়।

ছবি: ইন্টারনেট
এই ধরনের কাঠামোর সমাবেশ ঘটিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বাড়ির কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। কারণ কাঠামো একত্রিত করার আগে, অন্যান্য নির্মাণ কাজ যেমন- মেঝে, দেয়াল এবং বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র তৈরি করাই থাকে। এভাবে স্ল্যাব সমাবেশের পরে নির্মিত বিল্ডিংয়ে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ যুক্ত করে একে বাসযোগ্য করে তোলা হয়।
এমন বিল্ডিংগুলোর কাঠামো কলাম গঠিত নয়। তবে এতে রয়েছে প্রশস্ত জানালা এবং দীর্ঘ ব্যালকনি। সংস্থাটির দাবি, বিল্ডিং কাঠামোগুলো একত্রিত হওয়ার পরেও কাঠামোর বিভিন্ন ফিটিংগুলোর অবস্থান পরিবর্তন করা যেতে পারে। এতে ক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দেয় প্রতিষ্ঠানটি। কোম্পানির এক মুখপাত্র জানান, এই ধরনের কাঠামোর সমাবেশ ঘটিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি বাড়ির কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে। কারণ কাঠামো একত্রিত করার আগে, অন্যান্য নির্মাণ কাজ যেমন- মেঝে, দেয়াল এবং বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র তৈরি করাই থাকে। এভাবে স্ল্যাব সমাবেশের পরে নির্মিত বিল্ডিংয়ে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ যুক্ত করে একে বাসযোগ্য করে তোলা হয়।

ছবি: ইন্টারনেট
এই বিল্ডিংগুলোর মান নিয়ে প্রথমে প্রশ্ন উঠলেও পরে সংস্থাটি এসবের ভূমিকম্প সহনীয়তা ঘোষণা করে। কোম্পানির দাবি, ভূমিকম্প এবং টাইফুন প্রতিরোধে এটি প্রচলিত বিল্ডিংয়ের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি শক্তিশালী হয়। তবে এটিই চীনের একমাত্র স্থাপনা নয় যেটি দ্রুত সময়ে নির্মাণের রেকর্ড গড়েছে।

ছবি: ইন্টারনেট
এর আগে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকালে উহানে ২৫ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে হুওশেনশান নামক হাসপাতালটি মাত্র আট দিনের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। এই ধরনের প্রচেষ্টায় দেশটির সাফল্যের কারণ হিসেবে চীনা 'টপ-ডাউন' পদ্ধতির প্রশংসা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্যের সিনিয়র ফেলো ইয়ানঝং হুয়াং। তিনি বলেন, চীনারা আমলাতান্ত্রিক প্রকৃতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারে এবং সমস্ত সংস্থান একত্রিত করতে সক্ষম।
তথ্যসূত্র: দ্য ইউরএশিয়ান টাইমস