খেলাধুলা
রকিবুলের 'জয় বাংলা' ব্যাট এবং ইয়াহিয়ার পরিকল্পনার জলাঞ্জলি!

সংগ্রহীত ছবি
পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্কে বিরাজমান অস্থিরতা তখন চরমে। যুদ্ধের ঘন্টা তখনো বেজে উঠেনি, তবে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি বাঙালিদের মনে জমে ছিল পাহাড়সম ক্ষোভ আর জ্বলছিল তাদের প্রতি পদে পদে অবিচার ও প্রতিশোধের আগুন। সে আগুন আরো ভয়াবহ রূপ নেয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরও শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ দলকে সরকার গঠন করতে দেওয়া হলোনা। আরেকবার বৈষম্য আর নিপীড়নের স্বীকার হতে হলো তাদের। বাঙালি জাতি তখন স্বাধীকার অর্জনের জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্দোলনে তখন উত্তাল বাংলার রাজপথ। সাত কোটি মানুষের এই আন্দোলনকে দমাতে চেষ্টা করে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার।
ইয়াহিয়া খানের সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নিতে ক্রিকেটকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে বড় চাল দিতে চেয়েছিল। ব্যবহার করা হলো, পাকিস্তানের সাথে আন্তর্জাতিক একাদশের চলমান বেসরকারি টেস্ট সিরিজকে। প্রথম ম্যাচ করাচিতে হলেও, ইয়াহিয়ার নির্দেশে দ্বিতীয় ম্যাচের আয়োজন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় ঢাকা স্টেডিয়ামে তথা বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে।

From left: Raqibul Hasan Sr, Basil D Oliveira, and Shaheed Jewel.
ক্রীড়াঙ্গনেও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর বৈষম্যের নজির রয়েছে। পাকিস্তানের মূল একাদশের হয়ে কখনো খেলা হয়নি পূর্ব-পাকিস্তানের কোন ক্রিকেটারের। এমনকি, ১৯৬৯-৭০ মৌসুমে ঢাকায় অনুষ্ঠিত নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে তাদের অন্যতম এক সেরা ক্রিকেটার স্কোয়াডে ডাক পেয়েও, দ্বাদশ প্লেয়ার হিসেবেই থাকতে হয়েছে। কারনটা অনুমেয়, চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য নামমাত্র দলে জায়গা দেওয়া হয়েছে তাকে, খেলানোর জন্য নয়।
সে ক্রিকেটারকে আবার ডাকা হলো আন্তর্জাতিক একাদশের বিপক্ষে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে। নাম তার রকিবুল হাসান। পড়াশোনা করছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তখন পূর্ব-পাকিস্তানের 'পোস্টার বয়' হিসেবে জনমনে জায়গা করে নিয়েছিলেন রকিবুল। বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন পাকিস্তান (বিসিসিপি) দ্বিতীয় টেস্টে তাকে সুযোগ দিল মূল দলে। সুযোগ দিয়েছে ঠিক বিষয়টি এমন নয়। বরং পারফরম্যান্স দিয়েই তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন এই দলে। এরআগের বছর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেন রকিবুল। সেখানে পারফর্ম করেছেন নিয়মিত। খেলেছিলেন ৩টি শতরানের ইনিংস।

সংগ্রহীত ছবি
১৯৭১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা, টসে জিতে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিসিপি (বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন পাকিস্তান) একাদশের অধিনায়ক ইন্তিখাব আলম। উদ্বোধনী জুটিতে আজমত রানার সঙ্গী হিসেবে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা যায় একমাত্র বাঙালি ক্রিকেটার রকিবুল হাসানকে। তবে, দলে জায়গা পাওয়ার খবর ছাপিয়ে সামনে আসে আরেকটি বিষয়। একজন ফটোগ্রাফার প্রথম খেয়াল করলেন রকিবুলের ব্যাটে ভিন্ন চিত্র!
যেখানে ব্যাটে থাকার কথা আইয়ুব খানের নির্বাচনী প্রতীক তলোয়ার চিহ্ন, সেখানে অন্য কিছুর উপস্থিতি। ছুটে এলেন, ছবি তুলতে। খানিক পরেই স্টেডিয়াম জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়লো ‘জয় বাংলা’ স্টিকার নিয়ে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নেমেছেন এক যুবক। এ যেন অনন্য এক সাহসিকতার পরিচয়। আর পাকিস্তানের কাছে দেশদ্রোহীতার শামিল। তাতে কি? পাকিস্তান তো আমাদের রক্ত খেয়েই শক্তিশালী হচ্ছে। তাদের আর ভয় পাওয়ার উপায় নেই। এবার চুড়ান্ত লড়াইয়ের পালা।

সংগ্রহীত ছবি
ঘটনা জানার সাথে সাথেই স্টেডিয়ামে থাকা প্রায় ১৫ হাজার দর্শক একযোগে স্লোগান তোলে 'জয় বাংলা'। রকিবুল ততক্ষণে বুঝে গেলেন তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে। ঘটনাটির নীলনকশা আঁকা হয় ম্যাচের আগের দিন। এতো ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে যখন সুযোগ এসেছে বিষয়টি কাজে লাগানোর, ভুল করেননি রকিবুল। আগেরদিন পাকিস্তান টিমের সবাইকে ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস দেওয়া হয়েছিল। বাদ যাননি বাংলার পোস্টার বয়ও। ব্যাটের জন্য রকিবুলের পছন্দের ব্র্যান্ড ছিল 'গান অ্যান্ড মুর'। কিন্তু সবার জন্য 'গ্রে নিকোলস' ব্যাট বরাদ্দ ছিল। ব্যাটে লাগানো ছিল ইয়াহিয়ার নির্বাচনী তলোয়ার প্রতীক। গ্রে নিকোলসের লোগো লম্বা আকৃতির ছিল আর গান অ্যান্ড মুরের লোগো ছিল সমতল।
তখনই রকিবুলের মাথায় আসল ব্যাপারটা। সেসময় বাংলাদেশের গাড়িতে, দরজায় লাগানোর জন্য তিন কোনার স্টিকার বের হয়। সেই স্টিকারটায় ছিল পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মানচিত্র; লাল-সবুজের মধ্যে হলুদ আর উপরে ‘জয় বাংলা’ লেখা। তাৎক্ষণিভাবে রকিবুল সিদ্ধান্ত নেন মূল দলে জায়গা পেলে তার ব্যাট ব্যবহার করেই একটা নীরব প্রতিবাদ করবেন। এই বিষয়ে বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামালের সাথেও আলোচনা করেছিলেন রকিবুল। কামালের সাথে কথা বলে আরও উৎসাহিত হোন টগবগে সে তরুণ। যদি পরিকল্পনা অনুযায়ী সফল হতে পারেন তবে বর্হিঃবিশ্বে এবং দেশের মধ্যে একটা ভালো আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারবেন।

Ted Clark (left) and Raqibul Hasan Sr, at the toss in the first match by a visiting team on Bangladesh soil.
যেমন ভাবনা, তেমন কাজ! ব্যাট হাতে মাঠে নামতেই তুলকালাম কাণ্ড বেধে যায়! পাকিস্তানি প্রশাসনের কাছে সেই ঘটনা ছিল দেশদ্রোহীতার শামিল। যে কারণে পরবর্তীতে হুলিয়া জারি করেছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। ওই ছবিটি পরদিন পূর্ব পাকিস্তানের সব পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়। নজরে আসে অনেক বিদেশি সংবাদমাধ্যমেরও। সেখান থেকে বাঙালিদের আত্মবিশ্বাস আরও চাঙ্গা হয়। তেজস্বী হয়ে উঠে আন্দোলনের ধারা। ১লা মার্চ ছিল ম্যাচের চতুর্থ ও শেষদিন। সেদিন দুপুরের মধ্যে খবর আসে ৩রা মার্চ যে অ্যাসেম্বলি বসার কথা জেনারেল ইয়াহিয়া খান সেটা ভুট্টোর পরামর্শে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছেন।
এটা শোনার পর মাঠের মধ্যে যেন স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়লো। রেডিওতে সবাই তখন খেলার ধারা বিবরণী শুনছিলো। রেডিওতেই অ্যাসেম্বলি বাতিলের খবর শুনে চারদিকে প্রতিবাদ শুরু হয়। ছাত্ররা স্টেডিয়ামের গেইটে স্লোগান দিতে শুরু করে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুমে ডেকে পাঠানো হয়। আন্তর্জাতিক একাদশকে নেতৃত্ব দেয়া মিকি স্টুয়ার্ট তখনও অবহিত ছিলেন না মাঠের বাহিরের পরিস্থিতি সম্পর্কে। তাই খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি অনুরোধ জানালেন। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ছাত্রজনতা। পাকিস্তান দলের সদস্য সারফরাজ নেওয়াজ এক পর্যায়ে এক সৈনিককে বললেন, আন্দোলনকারীদের উপর গুলিবর্ষণ করতে। অগ্নিস্ফুরিত চোখে সেই সৈনিক উল্টো বন্দুক তাক করে ধরেছিলেন সরফরাজের দিকেই।

সরফরাজ নেওয়াজ
পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপের দিকে যাচ্ছিলো। আর অপেক্ষা না করে খেলোয়াড়দের মাঠ থেকে ড্রেসিংরুমে নিয়ে আসা হয়। জানানো হয়, ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনাবাহিনীর ট্রাক আসবে, খেলোয়াড়দের নিরাপদে সেনাক্যাম্পে নেয়া হবে। কিন্তু দুঃসাহসিক সে বালক আজও বেঁকে বসলেন। অসম্মতি জানালেন। বললেন, তিনি যাবেন না। তার সঙ্গী হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে থাকা তানভীর মাজহার তান্না। দু'জন মিলে মুচলেকা দিয়ে স্টেডিয়ামেই দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে পড়েন।
নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আগে-পরে পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক দল পাকিস্তানে ফিরে যায়। পাকিস্তানের কিংবদন্তী ক্রিকেটার জহির আব্বাস ঢাকা ছাড়ার আগে রকিবুলের সাথে দেখা করেছিলেন। ওই বছরের মে মাসে পাকিস্তান দলের ইংল্যান্ড সফরের কথা ছিল। তাই সেদিন জহির রকিবুলকে বলেছিলেন, করাচিতে দেখা হবে। তিনি ধরেই নিয়েছিলেন রকিবুল যেহেতু পাকিস্তান দলে জায়গা পেয়েছে, আসন্ন সিরিজেও তাকে দলে রাখা হবে। কিন্তু সেদিন প্রতুত্তরে সাহসিকতার সাথে রকিবুল বলেন, 'জহির, পরেরবার পাকিস্তানে এলে হয়তো নতুন পাসপোর্ট নিয়েই আসবো'।

সংগ্রহীত ছবি
ব্যাটে 'জয় বাংলা' স্টিকার লাগানো ম্যাচের দুই ইনিংসে এক রানের বেশি করতে পারেননি রকিবুল। তাতে কি? উদ্দেশ্য তো সফল হয়েছে! দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে তো তিনি আবদান রাখতে পেরেছেন। হিলিয়ে দিয়েছিলেন ইয়াহিয়ার সরকারকে। বাঙালি জাতির জন্য সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সে ম্যাচের পারফরম্যান্স তো আর রানের হিসাবে বিচার করা যাবে না! বিচার করতে হবে তার সাহসিকতা দিয়ে। সে ঘটনার জের ধরে, রকিবুলকে দেশদ্রোহী হিসেবে ঘোষণা করেছিল পাকিস্তান সরকার। হামলা দেওয়া হয়েছিল তার বাড়িতে, লুটপাটও করা হয়। দেখা মাত্রই তাকে গুলির নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। তাতেও দমে যাননি রকিবুল। বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীনতার সংগ্রামের ডাক দেন, ব্যাট ছেড়ে তখন অস্ত্র তুলে নেন। ঝাপিয়ে পড়েন যুদ্ধের ময়দানে।
তবে তাকে সমরযুদ্ধে না পাঠিয়ে, পরোক্ষভাবে কাজে লাগাতে চাইলেন বঙ্গবন্ধুর ভাতিজা শেখ শহিদুল ইসলাম। রকিবুলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন,
তোর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলা ক্রিকেট দল গঠিত হবে। ফুটবল দলের মতো ভারতের মাটিতে ক্রিকেট খেলে পুরো ভারতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জানাতে হবে, প্রকাশ ঘটাতে হবে।’
শেখ শহিদুলের নির্দেশে ভারতে পাড়ি জমান রকিবুল। সেখানে ধর্মতালায় গিয়ে স্বাধীন বাংলা টিম গঠন করেন। তবে, ব্যাট-প্যাড নিয়ে মাঠে নামার আগেই দেশ স্বাধীন হয়ে যায়।
বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে নামার আগে:
বাংলার এই দামাল ছেলের জন্ম পুরান ঢাকায়। ১৯৬৮ সালে মেট্রিক পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। তখন থেকেই ক্রিকেটে নিয়মিত ছিলেন। ১৯৬৭-৬৮ মৌসুমে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় কায়েদ-ই আজম ট্রফিতে পূর্ব পাকিস্তানের একাদশের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। এর আগ থেকেই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলতেন আজাদ বয়েজ ক্লাবের হয়ে। সে ক্লাবেই ক্রিকেটীয় জ্ঞানে দীক্ষিত হোন রকিবুল। কায়েদ-ই আজম ট্রফি খেলার জন্য করাচি ও লাহোর ভ্রমণ করে পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দল। সেখানে বিভিন্ন প্রাদেশিক দলগুলোর বিপক্ষে খেলে তারা। প্রথম ম্যাচেই রানের দেখা পেয়েছিলেন রকিবুল।
ম্যাচটি ছিল করাচির বিপক্ষে। সে দলে খেলেছিলেন পাকিস্তান টেস্ট দলের ৮ খেলোয়াড়। যাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, রকিবুল হাসানেরই আইডল হানিফ মোহাম্মদ। এরপর হায়দ্রাবাদের বিপক্ষেও তার ব্যাটে রান এসেছে। সে সফরেই সবার নজরে আসেন এই বিস্ময় বালক। পাকিস্তান সেসময়ে ভালো মানের ওপেনারের সন্ধানে মুখিয়ে ছিল। মুগ্ধতা ছড়ানো রকিবুল ডাক পান ট্রায়ালের জন্য। কিছুদিন পর ইংলিশ স্কুল বয়েজ টিম আসে পাকিস্তানে। তাদের বিপক্ষে অনুর্ধ্ব-১৯ দল গঠন করা হয়। রকিবুল হাসান ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নেন ঐ স্কোয়াডে।

সংগ্রহীত ছবি
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়:
যেদিন ব্যাটে 'জয় বাংলা' স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেদিন শুধু একটা ইচ্ছে নিয়েই মাঠে গিয়েছিলেন রকিবুল। আর তা হলো- পরবর্তীবার যেন স্বাধীন দেশের হয়ে ব্যাট ধরতে পারেন। রকিবুলের দেশ এখন স্বাধীন। ভিন্ন একটা দল এখন তাদের। থাকবে না কোন বৈষম্য। খোদ পাকিস্তান এখন তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষ। স্বাধীনতার পরবর্তী দুই বছর বাংলাদেশ বিনিমার্ণের কাজ চলে। ক্রিকেট সংস্করণ শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। দল পুর্নগঠনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন স্বাধীন দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা রকিবুল হাসান। স্বাধীন হওয়ার পরও দল গঠনে পড়েছিল ভাটার টান। প্রচার করা হয়েছিল, ক্রিকেট অভিজাত শ্রেনীর খেলা এবং অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে এই খেলার প্রয়োজন নেই। রকিবুল তা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবাদ জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার মিছিলে শেখ কামালও ছিলেন। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আর বঙ্গবন্ধুর সামনাসামনি হতে হয়নি। তিনি নিজেই খবর পাঠান, এ দেশে ক্রিকেট থাকবে। তখনই বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হয়। যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথ চলা।
যেদিন ব্যাটে 'জয় বাংলা' স্টিকার লাগিয়ে মাঠে নেমেছিলেন, সেদিন শুধু একটা ইচ্ছে নিয়েই মাঠে গিয়েছিলেন রকিবুল। আর তা হলো- পরবর্তীবার যেন স্বাধীন দেশের হয়ে ব্যাট ধরতে পারেন। রকিবুলের দেশ এখন স্বাধীন। ভিন্ন একটা দল এখন তাদের। থাকবে না কোন বৈষম্য। খোদ পাকিস্তান এখন তাদের আন্তর্জাতিক প্রতিপক্ষ। স্বাধীনতার পরবর্তী দুই বছর বাংলাদেশ বিনিমার্ণের কাজ চলে। ক্রিকেট সংস্করণ শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। দল পুর্নগঠনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন স্বাধীন দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা রকিবুল হাসান। স্বাধীন হওয়ার পরও দল গঠনে পড়েছিল ভাটার টান। প্রচার করা হয়েছিল, ক্রিকেট অভিজাত শ্রেনীর খেলা এবং অনেক ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে এই খেলার প্রয়োজন নেই। রকিবুল তা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। প্রতিবাদ জানানোর জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বঙ্গবন্ধুর কাছে যাওয়ার মিছিলে শেখ কামালও ছিলেন। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আর বঙ্গবন্ধুর সামনাসামনি হতে হয়নি। তিনি নিজেই খবর পাঠান, এ দেশে ক্রিকেট থাকবে। তখনই বাংলাদেশ ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড গঠিত হয়। যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথ চলা।

১৯৭৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর, স্বাধীন বাংলাদেশ সফরে আসে এমসিসি'র একটি দল। নর্থ জোনের বিপক্ষে প্রথম দুই দিনের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় রাজশাহীতে। রকিবুলকে অধিনায়ক করে সে ম্যাচের দল গঠন করা হয়। সে সফরে এমসিসি'র দলটি আরও ৩টি ম্যাচ খেলে। দ্বিতীয় দুই দিনের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় চট্রগ্রামে, ইস্ট জোনের বিপক্ষে। এমসিসি'র বিপক্ষে সিরিজের বড় আকর্ষন ছিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৩ দিনের আনঅফিশিয়াল ম্যাচ। শেষ দু'দিনের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় যশোরে। ঐ ম্যাচে রকিবুলের ব্যাট থেকে এসেছিল ৭৪ রান।
এমসিসি'র সে সফরের পর ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আইসিসির সহযোগী দেশ হিসেবে সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ দিয়ে ব্যাড-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই অন্যতম এই চরিত্র। পাকিস্তানের বিপক্ষে সেবার বাংলাদেশ একটি ম্যাচও খেলেছিলো। এর আগে তিনি বাংলাদেশের হয়ে ১৯৭৯, ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত ৩ টি আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই স্বপ্নদ্রষ্টা অবসরে যাওয়ার আগে দুই মেয়াদে অধিনায়কত্ব পালন করেন। প্রথম মেয়াদে ১৯৭৭-৭৯ সাল ও দ্বিতীয় মেয়াদে ১৯৮৩-৮৪ সালে।
হাবিবুল বাশার, মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের পূর্বসূরি রকিবুল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক জীবন্ত কিংবদন্তী। তার সে সাহসীকতার উপর দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট। বর্তমানে জড়িত আছেন দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নের সাথে। বাংলাদেশ ক্রিকেট যতদূর এগিয়ে যাবে তার অন্তরালে একজন সাহসী বীর যোদ্ধা হয়েই থাকবেন আমাদের প্রিয় 'রকিবুল হাসান'।