শেলটেক: দুই বন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত এক আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সফলতার গল্প
রিয়েল এস্টেট
শেলটেক: দুই বন্ধুর হাতে প্রতিষ্ঠিত এক আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সফলতার গল্প
শেলটেক লিমিটেড বাংলাদেশের অন্যতম আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। স্কুল পড়ুয়া দুই বন্ধুর হাত ধরে আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির জন্ম। এর মূল ব্যবসা আবাসন খাতে। বাংলাদেশে যে কয়টি কোম্পানি প্রথম দিকে আবাসন শিল্পে পদার্পণ করে তাদের একটি শেলটেক। এটি ’৮৮-এর শেষ দিকে যাত্রা শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে ১০-১২টার বেশি মানসম্মত কোম্পানি ছিল না। 
রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রসারটা হয়েছে মূলত নব্বইয়ের দশকের পর থেকে। ৩০ বছরের ব্যবধানে আজ রিয়েল এস্টেট হিসেবে শেলটেক একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। শেলটেক প্রতিষ্ঠাতা দুই বন্ধু হচ্ছেন  প্রয়াত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম. সেরাজ ও কুতুবউদ্দিন আহমেদ। ক্লাস থ্রি থেকে তারা একসঙ্গে পড়াশোনা করেন। সেই থেকে একই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এ পর্যন্ত একইসঙ্গে ব্যবসা করেন। ২০১৯ সালের ২২ জুন ব্যবসায়িক কাজে শেলটেকের চেয়ারম্যান কুতুবউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে স্পেন যাওয়ার সময় ফ্লাইটটি কাতারের দোহা বিমানবন্ধন পৌঁছানোর আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন শেলটেকের এমডি ড. তৌফিক এম. সেরাজ। ফ্লাইটটি দোহা বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানেই মারা যান তিনি। 
শেলটেকের শুরুর কথা
শেলটেক এমডি প্রয়াত ড. তৌফিক এম. সেরাজ; ছবি: সংগৃহীত
শেলটেক এমডি প্রয়াত ড. তৌফিক এম. সেরাজ; ছবি: সংগৃহীত
১৯৮৮ সালে তপন চৌধুরী, স্যামুয়েল চৌধুরী, কুতুবউদ্দিন আহমেদ শেলটেক প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৮৮ সালে তৌফিক এম সিরাজ সংস্থাটির কার্যক্রম চালু করেছিলেন। চৌধুরী ভাইয়েরা ২০০৮ সালে তাদের শেয়ার বিক্রি করে তাদের পারিবারিক ব্যবসা স্কয়ার গ্রুপের দিকে মনোনিবেশ করতে চেয়েছিল। শেলটেক-এর ৩ দশক উদযাপন উপলক্ষে মৃত্যুর আগে ২০১৭ সালে এক গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাতকারে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ড. তৌফিক এম. সেরাজ বলেন, আমরা যখন ব্যবসা শুরু করি তখন তো রিয়েল এস্টেট ব্যবসার ধারণাটি তেমন প্রচারই পায়নি। ৩০ বছরের ব্যবধানে আজ রিয়েল এস্টেট একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটা অনেক বড় একটি বিষয়। পরিবারের কেউই আমার ব্যবসার সিদ্ধান্তকে সাপোর্ট করেনি। কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে থাকি। আর একটু একটু করে সাফল্য আসতে থাকে। আমার স্ত্রী, মা, বোনের স্বামী, ছোট ভাই, পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই শিক্ষকতায় ছিলেন- আছেন। কিন্তু আমি শুধু ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, শেলটেক একটি ইউনিক কোম্পানি। কিন্তু আমাদের মূল ব্যবসা যেহেতু অন্যটা, তাই ঠিক টাকা কামানোই কনসাল্টিংয়ের ক্ষেত্রে আবশ্যক মনে করি না। আমার ব্যবসায় আমার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বেশি প্রেরণা দিয়েছে তাহলো অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য বা স্বাধীনতার বিষয়টা আমার পছন্দের ছিল। খুবই মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি। আর একটি সৎ মধ্যবিত্ত পরিবারে সব সময়ই টাকা-পয়সার একটা হিসাব-নিকাশ, টানাটানি থাকতই। এটাই স্বাভাবিক ছিল। 
কুতুবউদ্দিন আহমেদ; ছবি: সংগৃহীত
কুতুবউদ্দিন আহমেদ; ছবি: সংগৃহীত
সাফল্যের শীর্ষে শেলটেক
শেলটেকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করার পর আমি উচ্চশিক্ষায় মনোযোগ দিই। কুতুব তখন বেসরকারি চাকরিতে ঢোকে। এর কিছুদিন পর কুতুব গার্মেন্ট ব্যবসার উদ্যোগ নেয়। সেটাও আমাদের দেশের প্রথম দিকের গার্মেন্ট ব্যবসা। আমি ’৮৭ সালে পিএইচডি শেষ করে দেশে ফেরার পর কুতুবের ব্যবসা দেখতাম। কথাবার্তা বলতাম। কি ব্যবসা করা যায় সেগুলো নিয়ে কথাবার্তা হতো। আমি চিন্তা করতাম আমার শিক্ষাগত যোগ্যতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো ব্যবসার। রিয়েল এস্টেট বা অ্যাপার্টমেন্ট ব্যবসা বিষয়ে কথা হতো দু’জনের মধ্যে। নতুন ব্যবসা হিসেবে এবং আমার পছন্দের সঙ্গে মিল থাকায় আমরা মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম যে রিয়েল এস্টেট ব্যবসাই করবো। আজকে সেই শেলটেক এখন প্রতিষ্ঠিত আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান। ৩০ বছরে পদার্পণে রাজধানীর পশ্চিম পান্থপথের নিজস্ব কার্যালয়ে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেলটেক জানায়, বিগত ২৯ বছরে ১৬০টিরও বেশি প্রকল্পে গ্রাহকের কাছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তর করেছে  শেলটেক। আরও এক হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে গত দশকের শুরুতে আবাসন ব্যবসার দ্রুত উন্নতি ঘটেছে। সামনের দিনে আরো উন্নতি হবে এটা নিশ্চিত।
রিয়েল এস্টেটশেলটেক
আরো পড়ুন