আন্তর্জাতিক
আমিরাতের শাসক জায়েদ আল নাহিয়ান: আরব জগতে এক ব্যতিক্রমী যুগের সমাপ্তি!

গত শুক্রবার সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মারা গেছেন। মৃ্ত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তিনি একাধারে আবুধাবিরও শাসক ছিলেন। শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। ২০১৪ সাল থেকেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পর থেকে জনসমক্ষে আসতেন না তিনি। এতদিন যাবত তার সৎভাই যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল–নাহিয়ান নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান প্রথমেই দেশের নাগরিকদের সমৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করেন। তার মৃত্যুত ৪০ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে দেশটিতে। আরব আমিরাতের মানুষের নিকট তিনি ছিলেন বেশ সম্মানিত। আজ আমরা তার জীবনের অজানা কিছু বিষয়ে আলোচনা করব।

যেভাবে প্রেসিডেন্ট হলেন
খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের জন্ম ১৯৪৮ সালে। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ওমান সীমান্তের নিকটবর্তী আল আইনের মরুদ্যানে। প্রপিতামহ শেখ আল নাহিয়ানের নামের সঙ্গে মিল রেখে তার নামকরণ করা হয়। তার বাবা শেখ জায়েদ বিন সুলতান ছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম প্রেসিডেন্ট। ২০০৪ সালের ৩ নভেম্বর সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। বাবা শেখ জায়েদ বিন সুলতানের স্থলাভিষিক্ত হন এই সফল শাসক। এর আগে তার বাবা ১৯৭১ সাল থেকে ২০০৪ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আবর আমিরাতের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
সম্পদ ও প্রাচুর্য
শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাতটি ডোমের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং ধনী ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রকাশনা ফোর্বসের দেয়া তথ্য মতে, তার নিয়ন্ত্রণে ছিল ৯৭.৮ বিলিয়ন ব্যারল তেলের ওপর। এছাড়াও তিনি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল পরিচিলনা করেছেন যার মূল্য ৮৩০ বিলিয়ন ডলার।
বুর্জ খলিফা
পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান বুর্জ খালিফার নামকরণে তার বিশেষ অবদান রয়েছে। নির্মাণের পর এই ভবনের নাম রাখা হয় বুর্জ দুবাই। ২০১০ সালে প্রেসিডেন্ট শেখ খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ভবনের নাম পরিবর্তনের নির্দেশ দেন। তার ভাষ্যমতে তেল সমৃদ্ধ দুবাই যখন আর্থিক সংকটে পড়েছিল তখন খলিফা বা তার পরিবারই রক্ষা করেছিল।

ইন্টারনেট
পশ্চিমা প্রীতি
তার শাসনামলে ইসরাইলের ও আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করে আরব আমিরাত। আর এই কারণে তিনি পশ্চিমাপন্থি শাসক হিসেবে পরিচিত ছিলেন মুসলিম বিশ্বে। ২০২০ সালে মার্কিন পৌরহিত্যে ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে ইসরাইলের ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই চুক্তির মাধ্যমে কূটনৈতিক স্তরে ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল আরব দেশগুলি। চুক্তি বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন জায়েদ আল নাহিয়ান। ধারণা করা হয় তিনি এই চুক্তির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন।

ইন্টারনেট
ইসরাইলকে স্বীকৃতি
ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়ার মতো সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে বেশ আলোচনায় ছিলেন খলিফা বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। আরব বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে বিতর্কিত দেশটিকে স্বীকৃতি দেয় তারা। যদিও প্রেসিডেন্ট বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মনে করতেন আরব আমিরাতকে মধ্যপ্রাচ্য তথা বিশ্বের উন্নত দেশের কাতারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পশ্চিমাদের প্রযুক্তি, অস্ত্রের বিকল্প নেই। আবার অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন ইরানের দাপট কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
তথ্যসূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস