অর্থনীতি
বিটিআই: গৃহনির্মাণ শিল্পে শীর্ষে পৌঁছানো এক আবাসন কোম্পানির গল্প
১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু করে বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেড (বিটিআই)। প্রথম দিকে ইস্টার্ন হাউজিং, প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট এবং ইস্পাহানি গ্রুপের একটি হাউজিং কোম্পানিসহ মোট তিনটি কোম্পানি বাংলাদেশে হাউজিং ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিল। চতুর্থ কোম্পানি হিসেবে বিটিআইয়ের যাত্রা শুরু। এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত ও প্রাচীন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। যাত্রালগ্ন থেকেই বিটিআইয়ের মিশন ছিল গৃহনির্মাণ শিল্পে শীর্ষে পৌঁছানো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে এই রিয়েল এস্টেট কোম্পানির ছিল নিজস্ব এক মূলমন্ত্র। সেই মূলমন্ত্রের কথা জানিয়েছেন বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের (বিটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি এফ আর খান।

ছবি: সংগৃহীত
বিটিআইয়ের সাফল্যের মূল মন্ত্র
গ্রাহক সন্তুষ্টিই তাদের মূলমন্ত্র। যাত্রালগ্ন থেকে বিটিআই সর্বোত্তম সেবা ও মানের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। বিটিআইয়ের মিশন ছিল গৃহনির্মাণ শিল্পে শীর্ষে পৌঁছানো। মূলমন্ত্র ছিল গুণগত মান অটুট রাখা ও সর্বোচ্চ সেবা যা ক্রেতার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি।
গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এফ আর খান বলেন, গ্রাহক সন্তুষ্টিই তাদের মূলমন্ত্র। যাত্রালগ্ন থেকে বিটিআই সর্বোত্তম সেবা ও মানের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে। বিটিআইয়ের মিশন ছিল গৃহনির্মাণ শিল্পে শীর্ষে পৌঁছানো। মূলমন্ত্র ছিল গুণগত মান অটুট রাখা ও সর্বোচ্চ সেবা যা ক্রেতার প্রত্যাশার চেয়ে বেশি। গৃহনির্মাণ শিল্পের অতীত গল্প বলতে গিয়ে এফ আর খান বলেন, ২০০০-০৬ সালে গৃহনির্মাণ শিল্প ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকে। বিটিআই নির্দিষ্ট লক্ষ্যের চেয়েও তখন বেশি সাফল্য অর্জন করে। পরে আবাসন শিল্পে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়, যা মোটেও প্রকৃত ছিল না। তখন অনেকে বুঝে উঠতে সক্ষম হননি, এ রমরমা অবস্থা স্থায়ী হবে না। ঠিক এ সময়ে ভবিষ্যৎ ক্রান্তিকালীন মুহূর্ত মোকাবেলায় বিটিআই কিছু পন্থা অবলম্বন করে।

বিটিআই ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি এফ আর খান; ছবি: সংগৃহীত
খারাপ পরিস্থিতি যেভাবে মোকাবেলা করে বিটিআই
২০০৯-১২ সালে মূল আঘাত আসে আবাসন খাতে। তখন বিটিআই নিজের অবস্থান শক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিল শুধু কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করে রাখার ফলে। ওই সময়ে বিটিআই বুঝতে পারে, এটাই মূলত স্থিতিশীল মার্কেট এবং এর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সেভাবেই অবস্থানকে ধরে রাখার কারণে বিটিআই বর্তমানে একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের (বিটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্থপতি এফ আর খান বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপটের দরুন গৃহনির্মাণ শিল্প রুগ্ণ হতে শুরু করে। এ সময় বিটিআইর মুনাফা কিছু কমে গেলেও খারাপ অবস্থায় পতিত হতে হয়নি। ২০০৯-১২ সালে মূল আঘাত আসে আবাসন খাতে। তখন বিটিআই নিজের অবস্থান শক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিল শুধু কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন করে রাখার ফলে। ওই সময়ে বিটিআই বুঝতে পারে, এটাই মূলত স্থিতিশীল মার্কেট এবং এর ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। সেভাবেই অবস্থানকে ধরে রাখার কারণে বিটিআই বর্তমানে একটি ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
যা অন্যদের থেকে বিটিআইকে করেছে আলাদা

ছবি: সংগৃহীত
নতুনত্বই হলো মূল উৎস, যা বিটিআইকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে যথেষ্ট। প্রতিটি প্রকল্পে নতুনত্ব নিয়ে আসাই বিটিআইর মূল লক্ষ্য।
এফ আর খান বলেন, নতুনত্বই হলো মূল উৎস, যা বিটিআইকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে যথেষ্ট। প্রতিটি প্রকল্পে নতুনত্ব নিয়ে আসাই বিটিআইর মূল লক্ষ্য। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত থাকবে। গ্রাহকরা আমাদের এই বৈচিত্র্যে অভিভূত। এ জন্য তারা আমাদের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হোম অটোমেশন প্রযুক্তিকে বাংলাদেশে পরিচিত করানোর লক্ষ্যে বিটিআই কাজ শুরু করেছে। এ প্রযুক্তিতে একটি নির্দিষ্ট রিমোটের মাধ্যমে সমগ্র ঘরের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এ ছাড়া রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং, বিল্ট ইন ওয়াটার পিউরিফিকেশন সিস্টেম, ইকো ফ্রেন্ডলি পেইন্ট, এলইডি লাইটিং, পেলিভেনলি উইন্ডো এবং স্লাইডিং ডোর, স্যানিটারি পাইপিংয়ে সিপিভিসি ব্যবহার করে বিটিআই, যার স্থায়িত্ব অনেক বেশি। এ ছাড়া আরও নিত্য-নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিটিআই গ্রাহকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। চাহিদার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে চাহিদা মাফিক ডিজাইন করে দেয়া হয়।
গ্রাহক সন্তুষ্টির মূল মন্ত্র

ছবি: সংগৃহীত
গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের মূল মন্ত্র। বিটিআই ক্রেতার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছে। বিটিআই আবাসন খাতে সকল নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ মেনে চলে এবং আবাসন শিল্পে ব্যবহৃত ছোট থেকে বড় সকল পণ্যের মান উৎকৃষ্ট।
এফ আর খান বলেন, বিক্রয়-পরবর্তী সেবা প্রদানের জন্য কাস্টমার রিলেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআরডি) খোলা হয়েছে। সিআরডিতে কাস্টমারকে যেকোনো রকম সহায়তার জন্য ৫০ কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন। গ্রাহক সন্তুষ্টিই আমাদের মূল মন্ত্র। বিটিআই ক্রেতার আস্থা অর্জনে শতভাগ সফল হয়েছে। বিটিআই আবাসন খাতে সকল নিয়ম-কানুন সম্পূর্ণ মেনে চলে এবং আবাসন শিল্পে ব্যবহৃত ছোট থেকে বড় সকল পণ্যের মান উৎকৃষ্ট। বর্তমানে বিটিআইর মোট ৭০টি প্রকল্প চলমান, যার ৫৫টি ঢাকায় এবং ১৫টি চট্টগ্রামে। বিটিআই সমগ্র দেশে ব্যবসা প্রসারে আশাবাদী। এফ আর খান বলেন, বর্তমানে আবাসন খাতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ অবস্থায় বিটিআই আগের মতো মুনাফা অর্জনে সক্ষম হচ্ছে না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস সহজলভ্য করে দেয়া গেলে এ খাত একদিন ঘুরে দাঁড়াবে। এ ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন ফি ও ট্যাক্স কমিয়ে আনা প্রয়োজন। ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ভালো ডেভেলপার বাছাই করা জরুরি এবং ভালো মানের ফ্ল্যাটের দাম একটু বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। গ্রাহকদের বুঝে-শুনে বিনিয়োগ করা এবং আস্থাশীল ডেভেলপার নির্বাচন করা যুক্তিযুক্ত।